ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন
যেভাবে কাজ করবে রাষ্ট্র সংস্কারে ৬ কমিশন
- আপলোড সময় : ১৪-০৯-২০২৪ ০১:৫১:১২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৪-০৯-২০২৪ ০১:৫১:১২ পূর্বাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা ৬টি কমিশনের মধ্যে ৩টির তিন প্রধান জানান, ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ করা হবে। কাজ শেষ করা হবে তিন মাসের মধ্যে। পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠনের পর সরকারের দেওয়া টার্মস অব রেফারেন্সের ভিত্তিতে কাজ শুরু করবেন বলেও জানিয়েছেন তারা। আগামী ১ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ কমিশনগুলো কাজ শুরু করবে। ৩ মাসের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দেওয়ার কথা।
গত বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তারা সংস্কার চান, সংস্কারের মাধ্যমে জাতি হিসেবে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে চান। তিনি জানান, সংস্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ৬টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব কমিশনের কাজ পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ৬ জন বিশিষ্ট নাগরিককে কমিশনগুলো পরিচালনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বার্তা ও আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের জন্য কিছু জাতীয়ভিত্তিক সংস্কার স¤পন্ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্রে রেখে ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে ৬টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এসব কমিশন আগামী ১ অক্টোবর কাজ শুরু করবে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন সরফরাজ হোসেন, বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. শাহদীন মালিক দায়িত্ব পালন করবেন। এসব কমিশনের অন্য সদস্যদের নাম কমিশন প্রধানদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। কমিশনগুলোর আলোচনা ও পরামর্শ সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছাত্র-শ্রমিক-জনতা আন্দোলনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
সম্ভাব্য সংস্কার প্রক্রিয়া স¤পর্কে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমি যতটুকু বুঝতে পারছি, এই কমিশনের কাজ হবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা বা এটাকে কার্যকর করা। আমার নিজের অভিজ্ঞতা, গবেষণালব্ধ জ্ঞান এবং গুড প্র্যাকটিস যেগুলো আছে, সেগুলোকে বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশের প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে। ২০০৪ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠিত হয়েছে। দুদক নিয়ে মানুষের যে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বিশাল ঘাটতি, সেটি বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের যে আমলাতান্ত্রিক প্রেক্ষিত, সেটি বিবেচনায় রেখে এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনের যে মূলমন্ত্র, রাষ্ট সংস্কারে সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এসবের পাশাপাশি কমিশনে যাদের সদস্য করা হবে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা একটি সুপারিশ করার চেষ্টা করবো। আমাদের মূল কাজটি হবে, আইনে দুদক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এর মধ্যে কোনো দুর্বলতা রয়েছে কিনা, এর সঙ্গে অন্যান্য যে আইন রয়েছে, সেগুলোকে বিবেচনায় নেওয়া এবং দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, দলীয় প্রভাবের কারণে দুদক এতদিন অকার্যকর থেকেছে- সেগুলোকে বিবেচনায় রাখা। দুদককে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষার প্রতিফলন যাতে ঘটে, সেটা মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে। এভাবে আমরা কাজটা শুরু করতে চাই।
গত বুধবার ৬টি কমিশন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, কমিশনের কার্যক্রম পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে স¤পন্ন হবে বলে আমরা ধারণা করছি। কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ সভার আয়োজন করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্রসমাজ, নাগরিকসমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে ৭ দিনব্যাপী একটি পরামর্শ সভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এই রূপরেখা কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তার একটি ধারণাও দেওয়া হবে।
পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া সাবেক সচিব সরফরাজ হোসেন বলেন, আমরা এখনো টার্ম অব রেফারেন্স পাইনি। পাশাপাশি কারা এই কমিশনের সদস্য থাকছেন তা-ও জানি না। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করেই ছাত্র-জনতার আকাঙ্খার যাতে প্রতিফলন ঘটে সেটা মাথায় রেখেই কাজ করবো। এখন পর্যন্ত আমি কিভাবে এই সংস্কার কার্যক্রম শুরু করবো সেই প্রস্তুতি নেইনি। তবে পহেলা অক্টোবরের মধ্যে পুরো কমিশন গঠিত হলে তাদের সঙ্গে বসেই কার্যপদ্ধতি ঠিক করা হবে। পাশাপাশি সরকার কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চায় সেটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া ড. শাহদীন মালিক বলেন, টার্মস অব রেফারেন্স না পেলে এখনই কিছু বলা সম্ভব না। আগে পুরো কমিশন গঠন হোক, সরকার টার্মস অব রেফারেন্স ঠিক করুক, তারপরই এ ব্যাপারে মন্তব্য করা যাবে। ফলে এখন কিছু বললে সেটা আগ বাড়িয়ে বলা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে স¤পর্কিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন-এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। এসব বিষয়ে সংস্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব কমিশনের কাজ পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ৬ জন বিশিষ্ট নাগরিককে কমিশনগুলো পরিচালিনার দায়িত্ব দিয়েছি। এরপর আরও বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়া আমরা অব্যাহত রাখবো।
কমিশনের সুপারিশগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন হবে জানতে চাইলে সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, কমিশন যে সুপারিশ করবে, সেটা অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবায়ন করতে পারবে। তবে যদি আইনের কোনো পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে আবার সংসদের প্রয়োজন হবে। কিন্তু সংস্কার কর্যক্রম করতে নানা ধরনের অধ্যাদেশ জারি করে সরকারই করতে পারে। তবে আইন-সংক্রান্ত কাজগুলো করতে সংসদের প্রয়োজন হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ